October 24, 2024, 12:16 pm

সংবাদ শিরোনাম :
৭ম আন্তর্জাতিক Flight Safety Seminar 2024 এর সমাপনী অনুষ্ঠান বিগত ১ বছরে দুবার ঝড়ে কপাল পোড়েছে কয়রা বাসির দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তবুও নির্বাহী প্রকৌশলী শারমিনকে গাজীপুরে পদায়ন সাবেক কমিশনার হারুনের দাপটে বসত ভিটে ছড়া এক দম্পতি   খুলনা কয়রায় হামলা করে আসামি ছিনতাই, ৫ পুলিশ সদস্য আহত খুলনা পাইকগাছায় বিগত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৪ আহত ৫৬  কয়রায় এক নারী বাসা বাড়ি কাজ করতে করতে বর্তমানে চা বিক্রি করেই স্বাবলম্বী কয়রা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতির মতবিনিময় সভা  আন্তরজাতকি এয়ারট্রাফকি কন্‌ট্রালারূক্স ডে উদযাপন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ আতিকুল ইসলামকে গ্রেফতার

বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে দেশের বাহির হতে পরিচালিত বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের কার্যক্রম দেশে পরিচালনার মাধ্যমে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের ৪ জন গ্রেপ্তার

দুর্নীতি রিপোর্ট ডেক্সঃ “বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই স্লোগান নিয়ে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরাল ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, খুনী, ছিনতাইকারী, অপহরণ,প্রতারক ও অনলাইন জুয়াড়ীদেরগ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অবৈধ অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের উঠতি বয়সীদের আসক্তির বিষয়টি লক্ষ করা যাচ্ছে। ইতিপূর্বে র‌্যাব বিভিন্ন সময় অবৈধ অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম ব্যবহার করে দেশের বাহিরে অর্থ পাচারের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। র‌্যাব ফোর্সেস এর সাইবার মনিটরিং টীম অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে দেশের বাহিরে অর্থপাচারের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে প্রতিনিয়ত সাইবার নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এবং র‌্যাব-১১ এর যৌথ অভিযানে গাজীপুরের শ্রীপুর ও রাজধানীর মালিবাগ এলাকা হতে দেশের বাহির হতে পরিচালিত বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের কার্যক্রম দেশে পরিচালনার মাধ্যমে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের অন্যতম মূলহোতা ১। মোঃ নিশাত মুন্না (২০), পিতাঃ মোঃ আব্দুল মান্নান, শ্রীপুর, গাজীপুর ২। মোঃ কামরুল ইসলাম শুভ (২৭), পিতাঃ মোঃ আলী আশরাফ, কদমতলী, ঢাকা ৩। মোঃ সুমন (৩৫), পিতাঃ মোঃ কমর উদ্দিন, মালিবাগ, ঢাকা ৪। মোঃ নাজমুল হোসেন বাবু (৩১), পিতাঃ মোঃ নাসির উদ্দিন, সুবর্নচর, নোয়াখালী’দেরকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ১৬টি মোবাইল ফোন, ১৮টি সিম কার্ড, ০১টি সিপিইউ, ০১টি মনিটর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা অনলাইন জুয়ার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, বিগত দেড় বছর যাবৎ চক্রটি বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনার সাথে জড়িত। দেশের বাহির হতে পরিচালিত বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের দেশীয় কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম মূলহোতা গ্রেফতারকৃত নিশাত মুন্না। তার নেতৃত্বে চক্রের ৭-৮ জন সদস্য বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের প্রচার, একাউন্ট খোলা, মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ লেনদেন, হুন্ডির মাধ্যমে পাশর্^বর্তী দেশে অর্থ পাঠানোর সাথে জড়িত ছিল। মূলত ফুটবল বিশ^কাপ, ক্রিকেট বিশ^কাপ, আইপিএল, বিপিএল, বিভিন্ন ফুটবল লীগ/টুর্নামেন্ট ও অন্যান্য খেলাকে কেন্দ্র করে দেশেরে উঠতি বয়সের তরুণদেরকে টার্গেট করে এই অনলাইন জুয়ার প্রচার করতো চক্রটি। এ চক্রের কেউ বিভিন্ন বিদেশী বেটিং সাইটের বাংলাদেশের প্রচার/মার্কেটিং এর কাজ করত; কেউ আগ্রহী ব্যক্তিদের বিভিন্ন সাইটের একাউন্ট খুলে দিত; আবার কেউ একাউন্ট করা ব্যক্তির নিকট হতে অর্থ সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে তা হুন্ডির মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম পরিচালনাকারীর নিকট প্রেরণ করত। তারা বিভিন্ন ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে কন্টেন্টের সাথে জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন, সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন, সরাসরি মানুষের কাছে বলার মাধ্যমে এই জুয়ার সাইটের প্রচারের কার্যক্রম পরিচালনা করত। পরবর্তীতে বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী ব্যক্তিরা তাদের সাথে যোগাযোগ করে একাউন্ট খুলত/তাদের প্রেরণ করা লিংক এর মাধ্যমে একাউন্ট খুলত। কোন নতুন গ্রাহক তাদের মাধমে বেটিং সাইটে একাউন্ট খুললে তারা কমিশন পেত। তারা ১ীইবঃ, গবষঃইবঃ, চধৎরগধঃপয, ঠবষশরবী, ইলইধলর ঈধংরহড়, খঁফড় গধঃপয সহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের কার্যক্রম দেশে পরিচালনার সাথে জড়িত ছিল। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি কর্তৃক অনলাইন জুয়া বা বাজি সংক্রান্ত বিভিন্ন এ্যাপস এবং ওয়েবসাইট ইতোপূর্বে বন্ধ করা হলে তারা ডোমেইন পরিবর্তন করে পুনরায় অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে জুয়া চালু করে। তারা নামে বেনামে একাধিক সিম সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রাহকদের নিকট হতে অনলাইন জুয়ার অর্থ সংগ্রহ করতো এবং প্রাপ্ত অর্থ থেকে নিজেদের লভ্যাংশ রেখে অবশিষ্ট টাকা তারা হুন্ডির মাধ্যমে পাশর্^বর্তী দেশে অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম পরিচালনাকারীর নিকট পাঠাতো বলে জানায়। তারা নিজেদের প্রাপ্ত লভ্যাংশের টাকা দিয়ে অনলাইনে জুয়া খেলতো এবং লভ্যাংশের টাকা জুয়া খেলে নষ্ট করতো বলে জানায়। তারা অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে অদ্যাবধি অর্ধ কোটি টাকার অধিক অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত নিশাত মুন্না বিভিন্ন অনলাইন বেটিং সাইটের দেশীয় কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম মূলহোতা। সে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যায়লয়ে তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যয়নরত। সে ঘওঝঐঅঞ গটঘঘঅ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল এবং ঘরংযধঃ গঁহহধ(সাইলেন্ট কিলার) নামে একটি ফেইসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন রোস্টিং/বিতর্কিত ভিডিও তৈরি করে প্রচার করতো। বিগত দেড় বছর পূর্বে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গ্রুপের বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন দেখে অনলাইন জুয়ার প্রতি আসক্ত হয়। তার অনলাইনের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বেটিং সাইটের প্রসারের জন্য ভিডিও বানাতে তাকে দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়। পরবর্তীতে সে অধিক অর্থ লাভের আশায় বিভিন্ন বেটিং সাইটের প্রচার ও অন্যান্য কার্যক্রমের সাথে জড়িত হয়। সে তার ইউটিউব চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তার তৈরিকৃত ভিডিওতে বিভিন্ন অনলাইন জুয়া সাইটের বিজ্ঞাপন প্রচার করতো। সে তার প্রতিটি ভিডিওতে বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ১০ হাজার টাকা করে গ্রহণ করতো বলে জানায়। পরবর্তীতে সে নিজেও অনলাইন জুয়ার কার্যক্রম শুরু করে। ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুয়ার বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী ব্যক্তি তার সাথে যোগাযোগ করলে সে তাদেরকে অনলাইনে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে একাউন্ট খুলে দেয়ার বিষয়ে গ্রেফতারকৃত কামরুলের নিকট প্রেরণ করে।

গ্রেফতারকৃত কামরুল ¯œাতক শেষ করে একটি মোবাইল কোম্পানির সেলস রিপ্রেসেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করত। বিগত দেড় বছর পূর্ব থেকেই গ্রেফতারকৃত নিশাত এর সাথে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে সে গ্রেফতারকৃত নিশাত এর মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত হয়। সে স্বল্প সময়ে অধিক অর্থ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন পরিচিত লোকদের অনলাইন জুয়ার সাইটে একাউন্ট খুলতে উদ্বুদ্ধ করতো এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের অনলাইন জুয়ার বিভিন্ন সাইটে একাউন্ট খুলে দিতো। সে প্রতিটি একাউন্ট খুলার জন্য ৩০০ টাকা কমিশন পায় বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত সুমন অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেনের সাথে জড়িত ছিল। সে রাজধানীর মালিবাগে স্টেশনারী ও মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবসা করত। মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবসার সুবাধে গ্রেফতারকৃত কামরুল এর সাথে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত কামরুল তাকে স্বল্প সময়ে অধিক অর্থ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন বেটিং সাইটের একাউন্ট খুলে দেয় এবং তার মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে জুয়ার সকল টাকা লেনদেন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। গ্রেফতারকৃত সুমন পরিচয় গোপন করে অনলাইন জুয়ার আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করার জন্য সে কৌশলে তার পাশের একজন মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ীর নামে নিবন্ধনকৃত সিম সংগ্রহ করে, যাতে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এর মার্চেন্ট একাউন্ট হিসেবে লেনদেন করা যেত। পরবর্তীতে সে বিভিন্ন অনলাইন বেটিং সাইটের সকল প্রকার লেনদেন ঐ মোবাইল সিমটি দ্বারা নিবন্ধনকৃত মার্চেন্ট একাউন্টের মাধ্যমে সম্পন্ন করতো। এছাড়াও সে নামে বেনামে বিভিন্ন সিম সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেন করতো বলে জানা যায়। গ্রাহকদের নিকট হতে প্রাপ্ত অর্থ সে গ্রেফতারকৃত নিশাত মুন্না ও কামরুল এর সহায়তায় হুন্ডির মাধ্যমে পাশর্^বর্তী দেশে অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম পরিচালনাকারীর নিকট পাঠাতো বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত নাজমুল নোয়াখালীতে থাই গ্লাস ব্যবসা এবং মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবসা করতো। সে ০১ বছর পূর্বে গ্রেফতারকৃত কামরুলের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার আর্থিক লেনদেনের সাথে জড়িত হয়। সে নোয়াখালী অঞ্চলে বেটিং সাইটের জন্য গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় অর্থ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রহণ করতো এবং বেটিং সাইটে টাকা রিচার্জ/বেটিং সাইট হতে টাকা উত্তোলনের কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এছাড়াও সে নামে বেনামে বিভিন্ন সিম সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেন করতো বলে জানা যায়। সে গ্রেফতারকৃত কামরুল ও নিশাত মুন্নার সহায়তায় গ্রাহকদের থেকে প্রাপ্ত অর্থ পাশর্^বর্তী দেশে অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম পরিচালনাকারীর নিকট পাঠানোর সাথে জড়িত ছিল।গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন